শাহজাহান সরদার-এর জন্ম নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার নোয়াদিয়া গ্রামে। শিবপুর হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞানে প্রথম বিভাগে ১৯৭০ সালে এসএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থাকাকালীন ১৯৭৩ সাল থেকে সাপ্তাহিক প্রসঙ্গ পত্রিকার মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা শুরু হয়। এর আগে বিশ^বিদ্যালয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নতুন বাংলা পত্রিকায়ও খন্ডকালীন কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার পর পরই তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সাংবাদিকতাই তার পেশা। এর মধ্যে রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার, চিফ রিপোর্টার, উপ-সম্পাদক ও সম্পাদক হিসাবে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেছেন। আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসা দেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক খবর পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন। দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র রিপোর্টার থেকে চিফ রিপোর্টার হিসেবে এক যুগ দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক যুগান্তরে উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, দৈনিক মানবকণ্ঠের সম্পাদক, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের প্রধান সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন। বর্তমানে বাংলাদেশ জার্নাল-এর সম্পাদক। সাজু সরদার নামে আশি ও নব্বই দশকের প্রথমার্ধে সাপ্তাহিক খবরের কাগজ, সাপ্তাহিক পূর্বাভাস, সাপ্তাহিক একতা, সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ, সাপ্তাহিক দেশবন্ধু, ইংরেজী সাপ্তাহিক ঢাকা কুরিয়ার, সাপ্তাহিক সানডেসহ দেশের অধিকাংশ জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকার নিয়মিত রাজনৈতিক বিশ্লেষন ও কলাম লিখে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। রিপোর্টার হিসাবে আশির দশক থেকে শুরু করে ২০০৪ পর্যন্ত তার খ্যাতি উল্লেখযোগ্য। রিপোর্টার হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের সংবাদ, রাজনৈতিক বিভিন্ন সংবাদ, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সংসদ এবং নির্বাচন সম্পর্কিত অসংখ্য ব্রেকিং নিউজ করে সে সময় তিনি সমাদৃত হন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশ বিদেশের অনেক নেতার সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন। ২০০৪ সালে দৈনিক যুগান্তরের উপ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। সম্পাদক হিসাবে তার হাতেই এ পত্রিকাটি দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে গড়ে ওঠে। ১২ পৃষ্ঠার সংবাদপত্র ‘এক কাগজে সব খবর’ শ্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে। তিনি পৌনে দুই বছর এ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করেন। তিনি দৈনিক রূপালীর চীফ রিপোর্টার হিসেবেও কিছু দিন কাজ করেন। সংবাদপত্রে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে মামলা মোকদ্দমাসহ হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন সময় রিপোর্টের জন্য অনেক হুমকি-ধামকি আসে। পালিয়েও বেড়াতে হয়। তার বিরুদ্ধে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ঢাকা এবং টাঙ্গাইলে একযোগে দু’টি হয়রানি মূলক মানহানির মামলা করেন। বেশ কয়েক মাস ঢাকা-টাঙ্গাইলের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়। পরবর্তীকালে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। শাহজাহান সরদার টিভি টকশোর প্রধান উদ্যোক্তা। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তার উদ্যোগে এবং পরিচালনায় বেসরকারি টেলিভিশনে প্রথম টকশো ‘নির্বাচন ভাবনা’ প্রচার হয়। তিনি এটিএন বাংলার টকশো ‘অন্যদৃষ্টি’ প্রায় দেড় বছর উপস্থাপনা করেন। এছাড়া দেশের অধিকাংশ বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো এবং সংবাদ পর্যালোচনা মূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা এবং অংশগ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে শাহজাহান সরদার ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি আশির দশকে দুইবার ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ ফেডারেশ সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাচিত সহকারী মহাসচিব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দুইবার নির্বাচিত সভাপতি। এছাড়া আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থা (আইওজে) বাংলাদেশ শাখার তিনি প্রথম কার্যকরী সম্পাদক। ২০০০ সালে জাতিসংঘের মিলেনিয়াম সামিট, ১৯৮৭ সালে রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন, ১৯৯৯ সালে আমেরিকার সিয়াটলে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি প্রায় অর্ধশত দেশ সফর করেছেন। শাহজাহান সরদারের স্ত্রী হাসিনা সরদার একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে পেশা শুরু করেন। কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া দেখাশোনার জন্য ৫ বছর পর শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। শাহজাহান সরদার তিন পুত্র সন্তানের জনক। বড় ছেলে এস এম সাজেদুল হাসান (নাসিম) বুয়েট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্র্যাজুয়েশন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ড. নাসিম বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেক্ট্রিকের (জিই) সদরদপ্তর আলবিনিতে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন। মেজো ছেলে এস এম শামীমুল হাসান (আজিম) ঢাকার অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আই ইউ বি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ড. আজিম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসিতে অবস্থিত সে দেশের অন্যতম বৃহৎ কম্পিউটার ল্যাব ওক রিজ (ঙঅক জরফমব)-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন। তারা দু’জনই যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভার্জিনিয়াটেক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। ছোট ছেলে এস এম ফাহিম হাসান ঢাকার সরকারি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন। ডা. ফাহিম বর্তমানে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য পড়াশুনা করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকমূলক বই ম্যাডামের শাসন শাহজাহান সরদারের প্রথম বই প্রকাশ হয় ১৯৯২ সালে। পেশাগত প্রশিক্ষণে তিনি এক মাস জাপান অবস্থান করেন। জাপান সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে জাপানের রীতি নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যমূলক বই আমার দেখা জাপান প্রকাশ হয় ১৯৯৪ সালে। খবরের পেছনের খবর তার তৃতীয় বই। প্রকাশ হয় ১৯৮৮ সালে। রিপোর্টার থেকে সম্পাদক তার চতুর্থ বই। তার সর্বশেষ গ্রন্থ চেরী ফুলের দেশে। শাহজাহান সরদার জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা ক্লাব, অল কমিউনিটি ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ডিআরইউ জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ঢাকাস্থ মনোহরদী উপজেলা যুব কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহজাহান সরদার। এ সমিতির মাধ্যমে তিনি মনোহরদী উপজেলায় বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক কাজে অংশগ্রহন করেন। বিশেষ করে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মনোহরদীর বিভিন্ন স্থানে চক্ষু শিবির করে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে তার নেতৃত্বে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। তিনি নিজ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসায় সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করছেন। এলাকায় একটি শিক্ষাবৃত্তির জন্য প্রতিবছর তিনি অনুদান দিয়ে আসছেন।